স্বাধীনতা আজ কোথায় ?

মোঃ নিজাম উদ্দিন

স্বাধীনতা আজ কোথায় ?

ক্ষমতার জন্য জনগণের ভালোবাসা নিয়ে যুগে যুগে ছিল কত প্রতারণা। নেতাদের ভালোবাসার কাছে জনগণ বরাবরই নিষ্পেষিত। "ভালোবাসি তোমাকে" শুধু দুইটা শব্দ! এই দুইটা শব্দ মনের জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করে, সাগর মহাসাগর মহাদেশ জয় করার চাইতেও মনে হবে বেশি কিছু লুকিয়ে আছে "তোমাকে ভালোবাসি" এই দুইটি শব্দের মাঝে। কত কিছু দিয়ে মানুষ ক্ষমতাধর নেতারা একটু ভালোবাসা পেতে চায়! ভালোবাসতে ভাসতে হয়ে যায় স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক।
ভালোবাসা কখনও একজন ব্যক্তিকে ঘিরে, কখনও ভালোবাসা হয় রাষ্ট্রের জন্য। ভালেবাসার জন্য যুদ্ধ বিগ্রহ সংগ্রাম হয়েছে, জীবন বিলিয়েছে অকাতরে মানুষ। আফসোস আর না পাওয়ার বেদনা কুঁড়ে কুঁড়ে অনেকের জীবনকে করেছে দূর্বিসহ। জীবনের মধ্যাহ্ন দুপুরে কিংবা শেষ বিকেলে কৈশোরের স্মৃতিগুলো আপন যন্ত্রণায় ফিরে আসে। ফিরে আসেনা শুধু সেই প্রিয় মানুষগুলো, যারা স্বাধীনতা যুদ্ধে কিংবা গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জীবন বিলিয়েছে। 
শুধু বেঁচে থাকে কিছুর মানুষের স্মৃতি, কিছু গল্প, বেঁচে থাকে অমর কিছু কীর্তি।
নেতা অনেক বড় নেতা এক সময় হয়ে যায় কত একা, নেতার বিপদে কর্মী- দুধের মাছিরা কেটে পড়ে। কত পরীক্ষা করে আপন লোক নিয়োগ দিয়েছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান, খন্দকার মোস্তাককে চিনতে পারেননি। বেগম খালেদা জিয়া কি চিনতে পেরেছিলেন জেনারেল মঈন উদ্দিন, মাসুদ উদ্দিনকে? ক্ষমতার পরিবর্তন একেক সময় একেক রকম হয়। আগামীর জন্য কি অপেক্ষা করছে মহান আল্লাহই ভালো জানেন। তবে সময়ের দাবী মিটাতে পরিবর্তন প্রয়োজন অবশ্যসম্ভাবী। বড় কোন ক্ষতচিহ্ন যেন আমাদের মানচিত্রে না লাগে, দেশবাসীকে আল্লাহ যেন হেফাজত রাখেন। ক্ষমতার পরিবর্তন হয়ে গেলে আপন লোক বদলাতে সর্বোচ্ছ সময় কত ঘন্টা? 
বড় স্বপ্নের পিছনে ছুটে চলে অতি আপন মানুষগুলো নিরবে এক সময় হারিয়ে যায়! আঁধার কেটে আলো আসে, কিছু স্বপ্ন থেকে যায় অধরা। দলছুটরাই সব সময় ভালো থাকে। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে মির্জাফরের কিছু উত্তরসুরীদের সাথে নতুন করে পরিচয় হয়েছে, জেনারেল ইব্রাহীম, ব্যারিষ্টার শাহজাহান ওমর, সমসের তৈমুর গং রা, আরো আছেন কিছু ধর্ম ব্যবসায়ী।
কতটা গভীর ভালোবাসা থাকলে ত্রিশ লক্ষ মানুষ আত্মত্যাগ বিসর্জন দিয়ে দেশটাকে স্বাধীন করেছিল। সেই দেশপ্রেম এখন ক'জন মানুষের মাঝে আছে? জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস এই বাক্যটি আজ চরম ভাবে উপেক্ষিত। ক্ষমতার উৎস আজ সেন্টমার্টিন! একজন শেখ হাসিনার পছন্দের কাছে জিম্মি আজ ১৮ কোটি মানুষ, তিনিই একমাত্র ক্ষমতার অধিপতি। 
নিষ্ঠুর পৃথিবী আর জীবনযন্ত্রণায় "ভালোবাসি তোমাকে" এই দুইটি নিখাঁদ শব্দ আজ দুস্পাপ্য। ইন্ডিয়া, চায়না, রাশিয়া, আমেরিকা আমাদের কত ভালোবাসে- তাই না! কেন ভালোবাসে? তাদের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য আমরা কখনও গ্যাস দিতে চাই, কখনও অতি পছন্দের প্রিয় সেন্টমার্টিন দ্বীপ! আঠারো কোটি মানুষের মূল্যায়ন কোথায়? যে কোন রাষ্ট্রের জনগণ যখন চরম ভাবে উপেক্ষিত হয়, নিশ্চুপ কষ্ট চারদিকে ঘুরে, বাতাসে কান পাতলে মানুষের বোবাকান্না তখন শুনা যায়। ক্ষমতার জাদুমন্ত্রে বিচার বিবেক বলতে যেখানে কিছুই থাকেনা, মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো যখন নিঃশেষ হয়ে যায়। তেমন প্রেক্ষাপটে বিদ্রোহী কেউ আপন শক্তিতে জেগে ওটে- বিপ্লব সংঘটিত হয় তাকে ঘিরে। জনাব ওবায়দুল কাদের গত সেপ্টেম্বরে বলেছিলেন বিবেকের আদালতে দায়বদ্ধ তাই দেশবাসী এবং বহিঃবিশ্বের কাছে গ্রহণযোগ্য একটা নির্বাচন আমরা করতে চাই। 
প্রশ্ন কার কাছে করবো! বিবেক কি জেগে ওঠছে নাকি পঁচে গেছ? বলুন তো ২০১৪/১৮ আর ২৪ এর মধ্যে প্রার্থক্য আছে কি? সর্বত্রই ছিল একদলীয় প্রতিযোগিতা ডামি, ডামি আর ডামি। ছিল শুধু স্বামী স্ত্রীর ক্ষমতার ভালোবাসা। নির্লজ্জ গণতন্ত্র, একজনের ইচ্ছাতেই হয়েছে সমস্ত আয়োজন। ঘুম থেকে জেগে বিকেলে ফলাফল ঘোষণা করেছে শুধু ইলেকশন কমিশন।
এমন করে একটা রাষ্ট্র জাতি এতো কলঙ্ক নিয়ে চলতে পারেনা।
নিশ্চয়ই কোন একদিন পরিবর্তনের দাবীতে ভুমিকম্প হবে, হবে গণবিস্ফোরণ। স্বাধীন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবীতে কখনও প্রলয় ঘটেছে, বিপ্লবীরা জীবন দিয়েছে।
আসুন নিজের ভাগ্য নিজে গড়ি পৃথিবীর সমস্ত ভালোবাসা বাদ দিয়ে ভালোবাসী নিজেকে, ভালোবাসি দেশকে। এর চাইতে বড় ভালোবাসা আর হয় না। আমার আজকের প্রশ্ন, ক্ষমতার উৎস জনগন নাকি একজন শেখ হাসিনা? 
আঠারো কোটি মানুষের স্বাধীনতা কোথায়? আমি আমার স্বাধীনতা ভোটাধিকার চাই। আমি ভালোবাসতে চাই আমাকে, আমি ভালোবাসি আমার দেশকে। 
অনেক নেতারা মন বিবেক থেকে বলতে পারে না "ভালোবাসি তোমাকে" প্রিয় বাংলাদেশ। 
আমি প্রশ্ন করি স্বাধীনতাকে "হে স্বাধীনতা তুমি কেন এসেছিলে এই বাংলায়"? রক্ত গঙ্গায় ভাসিয়ে লক্ষ মানুষের জীবন শুধু কেঁড়ে নিয়েছো। তোমার আমার স্বাধীনতা তো আজ কোথাও নাই!

লেখকঃ মোঃ নিজাম উদ্দিন, সাবেক চেয়ারম্যান, উত্তর খুরমা ইউনিয়ন পরিষদ,ছাতক সুনামগঞ্জ ও যুগ্ম সম্পাদক সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপি।